আগামি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ৮৬ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে মূল এডিপি ৭৯ হাজার ৩১ কোটি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং থোক হিসাবে ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের মতোই আগামি অর্থবছরেরও বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে পরিবহন খাত। এই খাতে আগামি অর্থবছরের জন্য ১৮ হাজার ৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট এডিপির ২২ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের জন্য ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, সরকারের নিজস্ব তহবিল ও বৈদেশিক সহায়তার মাধ্যমে আগামি এডিপির ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক এগিয়ে গেছে। বিগত সময়ের তুলনায় আগামি বাজেটের আকারও বেড়েছে। এজন্য এডিপির আকার বেড়েছে।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী এবার প্রস্তাবিত এডিপিতে আরও অতিরিক্ত ১ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। সব কিছু মিলিয়ে আগামি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ৮৬ হাজার কোটি টাকার এডিপির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আগামি এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫১ হাজার ৩৩১ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, এবার বৈঠকে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পদ্মা সেতুর গুরুত্ব বিবেচনায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী বড় অংকের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। শিক্ষার প্রসার ও গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা ও ধর্ম খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ খাতে এডিপির ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ অর্থাৎ মোট ৯ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ বিভাগে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা।
মন্ত্রী জানান, নতুন বাজেটে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে ৭ হাজার ৮৭৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট এডিপির ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনয়নে ও অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ৬ হাজার ৮৭১ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং কৃষি খাতে ৫ হাজার ৫৭৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এছাড়া স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৪ হাজার ৯৪৩ কোটি ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।
বরাবরের মতই নতুন এডিপির ঘাড়ে চাপছে ৩০৮ মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের বোঝা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ সব প্রকল্পের ঘানি টানতে হবে সরকারকে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দসহ মোট ১ হাজার ১৮৭টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৮৭৯টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৩৪টি, জাপানি ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিলের (জেডিসিএফ) ২১টি এবং সংস্থা বা কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নের ১৫৩টি প্রকল্প রয়েছে।
সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের বাইরে আগামি অর্থবছরের এডিপিতে সম্পূর্ণ নতুন প্রকল্প অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে ২৯টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ২৪টি এবং কারিগরী সহায়তা প্রকল্প ৫টি। এ ছাড়া বরাদ্দহীনভাবে সংযুক্ত অননুমোদিত সবুজ পাতায় প্রকল্পের সংখ্যা হচ্ছে ৬৮১টি। বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধার্থে অনুমোদনহীন প্রকল্প থাকছে ২৭৬টি।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের (২০১৩-১৪) এডিপিতে মোট প্রকল্প ছিল ১ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প ১ হাজার ৪৬টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৮৮৭টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১২৯টি, জেডিসিএফ প্রকল্প ৩০টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নের ১৩০টি প্রকল্প। তবে বরাদ্দসহ প্রকল্পের মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প ছিল ৫০টি। তার মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৩৪টি ও কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৬টি।
এদিকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপিতে ৩২৪টি প্রকল্প সমাপ্তির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ২৮৫টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৩০টি এবং জেডিসিএফ প্রকল্প ৯টি। চলতি অর্থবছরের (২০১৩-১৪) এডিপিতে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ৩০৫টি প্রকল্প। তা ছাড়া পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) প্রকল্প হিসেবে রয়েছে ১৭টি প্রকল্প। চলতি অর্থবছরে পিপিপির লিংক প্রকল্প হিসেবে যুক্ত ছিল ৪৪টি প্রকল্প।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS